শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০১৫

তারিণী মায়ের মন্দির ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৫.০৬.২০১৫ /





তারিণী মায়ের মন্দির
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৫.০৬.২০১৫ /
১৪৮০ খৃস্টাব্দে পুরীর গজপতি রাজা শ্রী পুরুষোত্তম দেব , ‘কাঞ্চী যুধ্যের’ সময় তৎকালীন কেঞ্জোর রাজ্যের রাজা শ্রী গোবিন্দ ভঞ্জ দেও মহাশয়কে তাঁর সেনাপতি রূপে আহ্বান করেন । শ্রী গোবিন্দ ভঞ্জ দেব যুধ্যে পারদর্শী ছিলেন তাই শ্রী পুরুষোত্তম দেবের আহ্বানে তাঁর সঙ্গে কাঞ্চি অভিযানে যাত্রা করেন। গজপতি রাজা পুরুষোত্তম দেব কাঞ্চী জয় করে কাঞ্চী রাজার রাজ কন্যা ‘পদ্মাবতী দেবীকে’ সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং পাট রানি করেন । এই ইতিহাস অতি প্রাচীন 
ছোট করে বলতে হলে ঃ পুরীর জগন্নাথের রথ দেখতে কাঞ্চীর রাজা এসেছিলেন । রথের প্রারম্ভে পুরীর গজপতি মহারাজা , শ্রী জগন্নাথ ,বলভদ্র এবং মা সুভদ্রার রথে ‘ছেরা পঁহরা’ করে থাকেন। এটাই রীতি । ছেরা পঁহরা অর্থাৎ সোনার ঝাঁটা দিয়ে চন্দন এবং বেল ফুল দিয়ে সারা রথ পরিক্রমা করে নিজে রাজা ঝঁট দেন । সেই ঝাঁটা হাতে রাজাকে দেখে কাঞ্চীর রাজা পুরীর গজপতি রাজাকে ম্যাথোর ভাবেন এবং উপহাস করেন । এতে গজপতি রাজা অপমানিত হন এবং শপথ করেন কাঞ্চী রাজ্য জয় করে রাজকন্যা পদ্মাবতী দেবীকে মহারানী করবেন । যা ভাবা তাই হল । সেই যুধ্যে শ্রী গোবিন্দ ভঞ্জ দেব সেনাপতির ভূমিকা পালন করে কাঞ্চী যুধ্যে জয়ী হয়ে ফেরেন ।
কাঞ্চী যুধ্যের জয়ের খুশীতে গজপতি রাজা পুরুষোত্তম দেব শ্রী গোবিন্দ ভঞ্জ দেবেকে জিজ্ঞাসা করেন তাঁর কি অভিলাষ ! শ্রী গোবিন্দ ভঞ্জ দেব মা তারিণীকে তাঁর রাজ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে পূজো করতে চান এবং কেঞ্জোরে মায়ের মন্দির বানানোর পরিকল্পনা করেন। কিন্তু গজপতি রাজা বলেন এই আশা পূরণের উদ্দেশ্যে ‘মা তারিণীকে’ নিয়ে যাওয়ার অনুমতির জন্য মাকে প্রার্থনা করতে ; কারন মায়ের অনুমতি বিনা তাঁকে নেওয়া সম্ভব নয় । এর পর গোবিন্দ দেব মায়ের পূজোয় বসেন । মা তারিণী তাঁর পূজোয় সন্তুষ্ট হন বটে কিন্তু একটা সর্ত রাখেন। মা বলেন মা’কে নিয়ে যাওয়ার সময় রাজা গোবিন্দ দেব যেন পেছন ঘুরে না তাকান মা আসছেন কিনা দেখতে । রাজা রাজি হন মা’য়ের ওই সর্তে । রাজার সঙ্গে মা তারিণী ঘোড়ায় চড়ে রাজার পেছন পেছন যাচ্ছিলেন । কিন্তু ঘটগাঁর কাছে গভীর জঙ্গলে মায়ের ঘোড়ার আওয়াজ রাজা শুনতে পেলেন না । এতে রাজা বিব্রত হয়ে পেছনে তাকান । সেই সময় মা তারিণী প্রস্তরে পরিণত হয়ে এক বট গাছের তলায় অধিষ্ঠান করেন। রাজা যত মনঃ কষ্ট করে পূজার্চনা করলেও আর মা তাঁর রূপ ধারণ করেন না। সেই থেকে ‘মা তারিণী’ ঘটগাঁতে পূজো পেয়ে আসছেন ।
এই হল মা তারিণীর রূপ কথা । মা তারিণী মা কালীর আরেকটি রূপ । এই রূপকথা যুগ যুগ ধরে লোকের মুখে শুনতে পাওয়া যায়।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০১৫

জগন্নাথের স্নান যাত্রা



জগন্নাথের কথা——-

 
 
 
 
 
 
Rate This


জগন্নাথের স্নানযাত্রার পর মন্দির পনরো দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকে।জগন্নাথের জ্বর হয়। পনরো দিন পর মন্দির খোলা হয়। নয়নকল উৎসবে নয়ন খুলবে। জগন্নাথকে সাজানো হয়। জগন্নাথের স্নান, জগন্নাথের জ্বর, এছাড়া অনেক কথা আছে। আমি কিছুটা জানি তা লিখছি।
শ্রীক্ষেত্র পুরী হল মর্ত্যের বৈকুন্ঠ, দ্বারকা। পুরী মন্দিরের চারটা দরজা। অশ্ব,হস্তি, ব্যাঘ্র, সিংহ। অশ্ব-অর্থ, হস্তি-মোক্ষ,ব্যাঘ্র-কাম, সিংহ-ধর্ম। জগন্নাথ সিংহ দরজা দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করে। মহাপ্রভুও এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেন জগন্নাথ দর্শনে। হস্তি দরজা দিয়ে জগন্নাথ বের হয় সমাধিতে যাওয়ার জন্য। দরজা বন্ধ থাকে সবসময়। শুধু জগন্নাথ সমাধিতে যায় এই দরজা দিয়ে।
স্নান যাত্রার মূল তত্ত্ব লিখছি। একবার দেবকী, বাসুদেবের বাসনা হল তীর্থ স্নান করবে। বলরাম কৃষ্ণ বললেন দেবকী বাসুদেবকে। কুরুক্ষেত্রে অমাবস্যায় সূর্যগ্রহনের স্নান করলে মোক্ষ লাভ হয়। কুরুক্ষেত্রে একুশবার ক্ষত্রিয়দের বিনাশ করেছিল। তাদের রক্ত থেকে এই সরোবর। আবার পরশুরাম ওখানে তর্পন করে ঐ ক্ষত্রিয়দের। ঐ সরোবর পূর্ণ তীর্থে পরিনত হয়।
ঐ খানে সবাইকে নিয়ে আসেছেন দ্বারকাদীশ শ্রীকৃষ্ণ। মা দেবকী, বাসুদেব, সঙ্গে সুভদ্রা মাতা, কৃষ্ণের আট জন মহাপটরানী, সঙ্গে বলরাম তার সাথে বারূণী, রেবতী যাচ্ছেন। অনেক সৈন্য, অনেক বাদ্যযন্ত্র বাজছে।
নারদজী ভাবছেন, শ্রীকৃষ্ণ আসেছেন কুরুক্ষেত্রে এই কথা ব্রজবাসীদের বলতে হবে। নারদজী বীনায় কৃষ্ণ নাম করতে করতে চললেন ব্রজে। একমাসের বেশীসময় কৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রে থাকবে এই খবর দিতে চললেন নারদজী ব্রজে। ব্রজে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে অঙ্গে জ্বলতে লাগল। যোগ ধ্যানে বসলেন নারদজী কেন তার অঙ্গ জ্বলছে। বিরহ তাপে অঙ্গ জ্বলছে ব্রজধামের, যমুনার,স্থাবর-জঙ্গম, গোবৎস, গাভী, গোপ গোপী,মা যশোদা নন্দবাবা। কৃষ্ণবিরহে সবাই কাঁদছে। নারদজী দেখলেন ব্রজে নন্দালয়ে যশোদা ননী নিয়ে গোপাল গোপাল করে কাঁদছে। শ্রীদাম পটে আঁকা কৃষ্ণের ছবি দেখে কেঁদে কেঁদে বলছে, কানাইয়া দেখ মিষ্টি ফল আনেছি। এটো ফল দিই নি রে। এটো ফল দিলাম বলে তুই আমাকে ছেড়ে চলে গেলি এই বলে কাঁদতে লাগল।
এদিকে রাধা কাঁদে সখীদের গলা ধরে। নারদজী বললেন তোমাদের নয়নাভিরাম কুরুক্ষেত্রে। চল তোমরা দর্শন করবে তোমাদের প্রাণ গোবিন্দকে। রাধাকে বলল ললিতা চল সখী তোকে সাজিয়ে দিই।
রাধারাণী বলল আমি সেজে বসে আছি। নয়ন সেজেছে শ্যামের রূপ দর্শনে, হাত সেজেছে শ্যামের পদসেবনে,কানের ভূষন আমার শ্যামের নাম শ্রবন।
সবাই চল কুরুক্ষেত্রে। বিরহিনী গোপীরা এক কুঞ্জে শ্যাম আছে শুনে দর্শনে ব্যাকুলতা নিয়ে গেল। দেখল যে বনমালী, যে গোপালকে ওরা ভালবাসত সে কৃষ্ণ নয়। কোথায় বনমালা কোথায় চুড়া। এ রাজার বেশে কৃষ্ণকে ভালবাসে না ওরা। দেখা না করে চলল রাধা। যোগমায়া দেখলেন রাধারানী কৃষ্ণ দর্শন না করে চলে যাচ্ছেন। কৃষ্ণকে বলল রাধারানী চলে গেছে শুনে শ্যামের মনে বিরহ হল রাধা বিরহ। এদিকে যোগমায়া অপূর্ব কুঞ্জ রচনা করলেন রাধা আর প্রিয় সখীদের জন্য। কৃষ্ণ আসবেন রাধার সেই অপূর্ব কুঞ্জে। কিন্তু এর জন্য রুক্মণীকে মানে লক্ষীকে রাজি করাতে হবে। রুক্মনী তো রাজি হয় না কিছু তো। কিছুতে যেতে দেবে না তাকে। এই নিয়ে দুইজনের রাগ। তাইতো রাগ করে লক্ষী রান্না করে না। তখন কৃষ্ণ বলে আমার দাদা বলরাম কি দোষ করল,ও কেন না খেয়ে থাকবে। তাই শুধু পাচন রান্না করেন।
কুরুক্ষেত্রে এই স্নান এল জগন্নাথের স্নান যাত্রা। এই যোগমায়ার কুঞ্জ হল গন্ডিচা মন্দির। যা যোগমায়া তৈরি করলেন।জগন্নাথের জ্বর হল রাধার বিরহ জ্বর হল। জগন্নাথ যাবে রথে করে ভক্ত দর্শনে। রাধার কুঞ্জে গন্ডিচা মন্দিরে যাবে রথে করে। কিন্তু লক্ষী যেতে দেবে না। জগন্নাথের সাথে বলরাম সঙ্গে সুভ্দ্রা তাতে রাজি হলেন মা লক্ষী। তাই রথে আগে বলরাম, পরে সুভদ্রা তারপর জগন্নাথ।
ভুল হলে ক্ষমা করবে। আমি ভাগবত প্রবচকদের মুখে শুনে লিখলাম।
জয় জগন্নাথ
‪#‎priya‬

শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভুর নবকলেবর যাত্রা ২০১৫ (বঙ্গাব্দ ১৪২২ সাল) ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ৩১.০৩.২০১৫(বুধবার) / সন্ধ্যা ৭.৫০ ।




শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভুর নবকলেবর যাত্রা ২০১৫ (বঙ্গাব্দ ১৪২২ সাল)



1 Vote

jagannath-rath-yatra-2012-begins-puri 
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ৩১.০৩.২০১৫(বুধবার) / সন্ধ্যা ৭.৫০ ।   
পুরী কেবল মাত্র সমুদ্র,মন্দির,অন্যান্য সুন্দর সুন্দর দর্শনিও স্থান এর ক্ষেত্রই নয় বরং নানা উৎসব এবং যাত্রার মাধ্যমে পুরীর বৈচিত্র্য এক আলাদা তীর্থ স্থানের উপলব্ধি দেয় ।শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভুর  রথ যাত্রা বিশ্ব প্রসিদ্ধ । ভারত বর্ষের প্রায় প্রত্যেক সহরে এর অনুকরণে রথ যাত্রার আয়োজন মহা আড়ম্বরে হয় কিন্তু পুরীর রথ যাত্রার মহাত্ম আলাদা । পুরীকে শঙ্খ ক্ষেত্র , নীলাচল ক্ষেত্র , পুরুষোত্তম ক্ষেত্র  ইত্যাদি বহু নামে নামিত করা হয়েছে । যুগ যুগ ধরে কোটি কোটি ভক্তের সমাগম হয় শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভুর দর্শন অভিলাষে। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু ,শিখ ধর্ম গুরু , গুরু নানক , এই শ্রী ক্ষেত্রে তাঁদের স্মৃতি ছেড়ে গিয়েছেন । পুরীর স্বর্গ দ্বারের কাছে এক চৌ মাথার মোড়ে , শ্রী চৈতন্য দেবের মূর্তি আছে। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু গৌড় বাট সাহির রাস্তায় শ্রী মন্দিরে রোজ দর্শনে যেতেন , তাই ওই রাস্তার নাম গৌড় বাট (বাট= রাস্তা )।
ভারতবর্ষের চার ধাম (১) পশ্চিমে ,‘দ্বারকা ধাম’ গুজরাটের  দ্বারকায় , ‘দ্বারকাধিশ’  শ্রী কৃষ্ণর মন্দির বিদ্যমান। (২) উত্তরে  ‘কেদারনাথ ধাম’ । কেদারনাথের মন্দির বিখ্যাত শিবের মন্দির ,হিমালয়ের গাড়োয়াল অঞ্চলে  উত্তরাখণ্ডের মন্দাকিনী নদীর ধারে অবস্থিত । (৩)  পূর্বে শ্রী জগন্নাথের , “পুরুষোত্তম ক্ষেত্র”   (৪) দক্ষিণে “রামেশ্বরম”। রামেশ্বরমের  মন্দির ভগবান শিবের মন্দির। হিন্দু মতে এই চার ধাম ই ভারতের সর্ব বৃহৎ তীর্থস্থান । চার ধামের দর্শনে মহা পুণ্য সাধন হয় । এর মধ্যে শ্রী ক্ষেত্র অন্যতম ।  ae7028c4-edf8-4acd-830a-4e49e67ebb76HiRes
নব-কলেবর কি?ঃ- সাধারণ ভক্তের মনে নব-কলেবর কেন হয় এবং এর বিশেষত্ব কি এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক । যে বছর জোড়া আষাঢ় পড়ে সেই বছরটি শ্রী জগন্নাথ , বলভদ্র ও মা সুভদ্রার নব-কলেবর হয় । নব-কলেবর অর্থাৎ প্রভু জগন্নাথ ,বলভদ্র , দেবী সুভদ্রা ও সুদর্শনের  নতুন বিগ্রহ প্রস্তুতির পরে   ব্রহ্ম পরিবর্তন , নবযৌবন দর্শন এবং রথ যাত্রা উৎসব ।
বিগ্রহর প্রস্তুতির জন্য দারু অন্বেষণ যা কাকটপুরের মা মঙ্গলার স্বপ্নাদেশে বনযাগ যাত্রা নামে বলা হয় । এই যাত্রা থেকে নব-কলেবরের প্রস্তুতি পর্ব আরম্ভ ।
নব-কলেবর সম্বন্ধে কিছু তথ্য:-
যে বছর জোড়া আষাঢ় পড়ে সেই বছরটি শ্রী জগন্নাথ , বলভদ্র ও মা সুভদ্রার নব-কলেবর হয় ।  সাধারণত জোড়া আষাঢ় ৮, ১২ ,১৬ কিম্বা ১৯ বছর পর পড়ে । এবারে ১৯ বছর পর তিন ঠাকুরের নব-কলেবর যাত্রা সম্পন্ন হবে। বিংশ শতাব্দীর নব-কলেবর যাত্রা প্রথমে ১৯১২ ,১৯৩১ ,১৯৫০ , ১৯৬৯ , ১৯৭৭ এবং ১৯৯৬ সালে হয়েছিল। এই বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে নব-কলেবর যাত্রা ১৯ বছর বাদে পড়েছে । নব-কলেবর
১। বনযাগ যাত্রা:-    পুরীর গজপতি রাজা শ্রী দিব্য-সিংহ দেব রাজগুরু কে পৈতে , বস্ত্র এবং সুপুরি প্রদান করে বঞ্জাগ যাত্রার জন্য আদেশ দেন  । এই পরম্পরাকে গজপতি “রাজার আজ্ঞা” বলে বলা হয়। অর্থাৎ রাজা আদেশ দিলেন রাজগুরুকে , তিন ঠাকুরের জন্য দারু অন্বেষণে বনে যাওয়ার আয়োজন কর । সেইথেকে  বনযাগ যাত্রার শুভারম্ভ হল । যে বছর নব-কলেবর যাত্রা  থাকে তার পূর্ব বৎসরের চৈত্র মাসের শুক্ল দশমী থেকে সুরু হয় বনযাগ  যাত্রা । অর্থাৎ ১৪২১ চৈত্র মাসের শুক্লা দশমী তে আরম্ভ হল  ১৪২২ এর নব-কলেবর যাত্রার জন্য।

বনযাগ যাত্রা কি ?ঃ-  তিন ঠাকুরের নব-কলেবরের জন্য দারু সংগ্রহর জন্য যাত্রা কে ‘বনযাগ যাত্রা’  বলে । পুরীর গজপতি রাজার আজ্ঞা প্রাপ্তির পর একটি বিশেষ  দল , দল-বধ্য হয়ে যাত্রা আরম্ভ করে। গজপতি রাজা দিব্য-সিংহ দেব ; পুরী রাজার রাজগুরু কে পৈতে , বস্ত্র এবং সুপুরি প্রদান  করে এই যাত্রার শুভারম্ভ করেন ।  এই পরম্পরাকে “গজপতি রাজার আজ্ঞা” বলে বলা হয়।  অর্থাৎ রাজা আদেশ দিলেন রাজগুরুকে , তিন ঠাকুরের এবং সুদর্শনের  জন্য দারু অন্বেষণে বনে যাওয়ার আয়োজন কর ।
সে-ইথেকে  বনযাগ যাত্রার শুভারম্ভ:-
রাজগুরু যিনি জগন্নাথ মন্দিরের মুখ্য সেবায়ত , তিনি এই সংকল্প সুপারি দইতাপতি(রথের সময় এরা তিন ঠাকুরের সেবায়ত) দলপতি শ্রী হলধর দাস-মহাপাত্র কে প্রদান করেন । এই পরম্পরাকে শ্রী ক্ষেত্রে “গুয়া টেকা” বলে। এই সমস্ত পদ্ধতি গত ২৯  মার্চ ২০১৫(রবিবার) চৈত্র শুক্ল দশমী তে সুসম্পন্ন হয়েছে । এর পর জগন্নাথ মন্দিরের সিংহ দ্বার থেকে বনযাগ যাত্রা সুরু হল। শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের তিন ঠাকুরের   মধ্যাহ্ন ভোগের পর  অপরাহ্ণ ৩ টের সময় দারু-গৃহ অনুকূলের পর এই যাত্রা সুরু হয় ।
এই যাত্রাতে বরিষ্ঠ দইতাপতি হলধর দাস মহাপাত্র র সঙ্গে দলপতি অধ্যাপক দুর্গা-প্রসাদ দাস মহাপাত্র , ৯৬ জন দইতাপতি , ১৪ জন ব্রাহ্মণ , ১০ জন বিশ্বকর্মা(কাষ্ঠ শিল্পী) , শ্রী মন্দিরের ২ জন  পুরোহিত , ২ জন রাজগুরু , ১ জন পতি-মহাপাত্র , ১ জন লেঙ্কা , ১জন দেউল করণ(কায়স্থ) , ১ জন তঢ়উ করণ ,  সর্ব মোট ১৩০ জন  , মন্দিরের পুলিশ , ডাক্তার , এবং দারু পরিবহনের জন্য তিনটি বিশেষ ভাবে সজ্জিত গরুর গাড়ী । এখানে উল্লেখ যোগ্য সকলে পদব্রজে এই যাত্রা পুরী থেকে কাকটপুর মঙ্গলা মন্দির অবধি পুরী- কোণার্ক মেরিন ড্রাইভের রাস্তায় যাত্রা করবেন ।  ২৯ শে মার্চ ২০১৫(রবিবার)  সকলে পুরীর জগন্নাথ বল্লভ মঠে রাত্রিযাপন করেছিলেন ।
রাস্তায় বিভিন্ন যায়গায় বিশ্রাম এবং শ্রী মন্দির প্রশাসন থেকে খাদ্যের ব্যবস্থা আছে । সকলে মাটিতে শয়ন করবেন এবং সাত্ত্বিক মন্দিরের প্রসাদ সেবন করবেন । দিনের বেলায় ফল মূল ছাড়া অন্য কিছু আহার নিষিদ্ধ । রাত্রে বিশ্রাম এবং মহা-প্রসাদ সেবন।
এর পরদিন অর্থাৎ ৩০ শে মার্চ ২০১৫(সোমবার) শ্রী জগন্নাথ বল্লভ মঠ থেকে বিলম্বিত রাত্রিতে বেরিয়ে পুরীর সন্নিকটে নুআনই , বালিঘাই হয়ে রামচন্ডী মন্দিরে তে ৩১ শে মার্চ ২০১৫(মঙ্গলবার)  রাত্রিযাপন এবং বিশ্রাম ।    ১ লা এপ্রিল ২০১৫(বুধবার) পূর্বাহ্ণে যাত্রা সুরু এবং রাত্রে কুঢেই গ্রামের “শঙ্করে-শ্বর মন্দিরে”রাত্রিযাপন ।
১ লা এপ্রিল ২০১৫(বুধবার) পূর্বাহ্ণে যাত্রা সুরু এবং রাত্রে কুঢেই গ্রামের “শঙ্করে-শ্বর মন্দিরে” রাত্রিযাপন ।
২রা এপ্রিল ২০১৫ তে কাকটপুর “মা মঙ্গলার মন্দিরে” পৌঁছবেন । মা মঙ্গলার মন্দিরের “দেউলি মঠে” ২ তারিখে সকলে পৌঁছে রাত্রিযাপন করবেন ।
৩রা এপ্রিল ২০১৫ থেকে মা মঙ্গলার পূজার্চনা সুরু হবে । এর পর মা মঙ্গলা প্রসন্ন হলে স্বপ্নাদেশ হবে দারুর অবস্থিতি সম্পর্কে সূচনা । এসব প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হওয়ার পর দারুর সন্ধানে বনযাগ যাত্রীরা যাত্রা করবেন নির্দিষ্ট স্থানে ।
নব-কলেবর নিমিত্ত তিন ঠাকুরের জন্য যে বৃক্ষ চিহ্নিত করা হয় বা ব্যাবহার করা হয় তার লক্ষণ গুলি নিম্ন লিখিত অনুসারে নির্বাচন করা হয়:-
১. বৃক্ষ টি নিম বৃক্ষ হওয়া প্রয়োজন ।
২. বৃক্ষের অনতিদূরে ঊই ঢ়িপি , নদী , স্মশান কিম্বা পুষ্করিণী থাকা অনিবার্য । বৃক্ষের কাছে বেল গাছ ,তুলসী গাছ থাকা প্রয়োজন ।
৩. বৃক্ষে কোন পাখির বাসা থাকবে না , ঊই ঢ়িপির কাছে নাগ সাপ গাছটিকে পাহারা দিতে দেখা যাবে ।
৪. বৃক্ষের কোন অংশ কীট পতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত , কিম্বা বজ্র পাতের চিহ্ন থাকবে না । পূর্বে কোন ডাল কাটা না হওয়া প্রয়োজন । কোন রকম খুঁত থাকা চলবে না ।
৫. সেই বৃক্ষে শঙ্খ , চক্র , গদা ,পদ্ম চিহ্ন থাকা প্রয়োজন ।
৬. বৃক্ষটি অন্যূন ১২ ফুট  লম্বা সোজা এবং মোটা হওয়া প্রয়োজন যাতে অনায়াসে বিশ্বকর্মার দ্বারা  মূর্তি নির্মাণ কর্ম সুসম্পন্ন হবে ।
উপরোক্ত লক্ষ্মণ গুলি অনিবার্য এবং তারপর অন্বেষণকারী দল ঠিক করে পবিত্র দারু নির্বাচন করেন। এরপর দারু নির্বাচন কার্য সুসম্পন্ন হয় । বিশ্বকর্মা এরপর মাপজোপ করেন । এরপর যথাবিধি যজ্ঞশালা , যজ্ঞকুণ্ড , অঙ্কুরারোপণ গৃহ  নির্মিত হয়ে বনযাগ হোম আরম্ভ হয় । এরপর আচার্য অস্ত্র-পূজায় বসে সোনা , রুপো ও লৌহ কুড়ুলকে যথাক্রমে বিদ্যাপতি , বিশ্বাবসু ও বিশ্বকর্মা সেবকদের সহায়তায় বৃক্ষ ছেদন করা হয় ।

দারু ঘোষনাঃ-   বর্তমানের প্রশাসনের নির্দেশানুযায়ী কোন টিভি চ্যানেল কিম্বা অন্য মিডিয়ার লোক গণমাধ্যমে পূর্ব সূচনা দিতে পারবেন না । দারুর ফটো চিত্র উত্তোলন কিম্বা ভিডিও রেকর্ডিং নিষেধ । কোন সেবায়তের সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিষেধ আছে । প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে এইসব   ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । পবিত্র দারু সরকারি স্তরে ঘোষণা হবে এবং সেবায়ত ব্যতীত কোন জনসাধারণের স্পর্শ নিষেধ । দারু উত্তর দ্বার পথে শ্রী মন্দিরে প্রবেশ হবে।
প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সূচনা:-
একবিংশ শতাব্দীর এই প্রথম নব-কলেবর যাত্রার প্রারম্ভে প্রশাসনের গুরু দায়িত্ব যাত্রীদের সুরক্ষা,সুব্যবস্থা এবং সুচারু রূপে যাত্রা সুসম্পন্ন করা , যার প্রস্তুতি এবং ঘন ঘন মিটিং সুরু হয়েছে বৎসরের প্রারম্ভ থেকেই । এর জন্য পুরী টেম্পল এডমিনিস্ট্রেশনের মুখ্য প্রশাসক শ্রী সুরেশ চন্দ্র মহাপাত্র , আই।এ।এস ; পুরীর জেলা প্রশাসক (কালেক্টর) শ্রী অরবিন্দ অগরওয়াল, আই।এ।এস , পুরীর  গজপতি রাজা , মহামান্য শ্রী শ্রী দিব্য-সিংহ দেব  (চলন্ত বিষ্ণু বলে বলাহয় তাঁকে) ,  পুরীর বিধায়ক শ্রী মহেশ্বর মাহান্তী এবং পুরীর সাংসদ শ্রী পিনাকী মিশ্র । তা ছাড়া  মন্দিরের মুখ্য পাণ্ডা , দইতাপতি ও সেবায়তদের নিয়ে দফায় দফায় মিটিং চালিয়ে যাচ্ছেন । এর থেকে সহজেই অনুমেয় প্রশাসনের ব্যগ্রতা শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভুর নব-কলেবর যাত্রা যাতে সুসম্পন্ন হয় নির্বিঘ্নে ।
২০১৫ সাল জগন্নাথ রথ যাত্রার এক বিশেষ উৎসবের দিক হল ‘নব-কলেবর’ এবং এর জন্য রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকার উভয়েই প্রশাসনিক দিক থেকে তৎপর যাতে শ্রী জগন্নাথের নব-কলেবর যাত্রা সুচারু রূপে সম্পন্ন হয়। তাই কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী শ্রীযুক্ত ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং পর্যটন মন্ত্রী ডক্টর মহেশ শর্মা র নেতৃত্বে এ বছরের জগন্নাথের রথ যাত্রার বিশেষ নামকরণ করা হয়েছে যার নাম সরকারি স্তরে ধার্য হয়েছে“নব-কলেবর রথ যাত্রা” । এজন্য কেন্দ্র সরকার-থেকে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ।  আশা করা হচ্ছে এই বছর নব-কলেবরের সময় ২০ – ২৫  লক্ষ  ভক্তের সমাগম হবে । তাই প্রত্যেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের যাত্রীদের  সুব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে  কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার উভয় কিছু নতুন পদক্ষেপ নিয়েছেন। ভুবনেশ্বর থেকে পুরী যাওয়ার নতুন করে ৪ লেনের রাস্তা সম্পূর্ণ হয়ে-গিয়েছে তাই পুরী যেতে মাত্র ১ ঘণ্টা সময় লাগছে। রেল লাইন দোহরিকরন হয়েছে । বাস টার্মিনাল , কার পার্কিং ইত্যাদি নতুন করে মালতিপাটপুরের কাছে তৈরি হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটা ছোট ছোট যায়গা যেমন পিপিলি, সাক্ষীগোপাল ,চন্দন-পুর বাইপাস করে রাস্তা তৈরি হয়েছে । ভুবনেশ্বর থেকে রেড লাইন নন স্টপ বাতানুকূল বাস চালু হয়েছে পুরী পর্যন্ত যাত্রীদের সুবিধের জন্য ।
২০১৫ নব-কলেবরের জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বিশেষ বাজেট:- ১) শ্রী জীউ জগন্নাথ,বলভদ্র, দেবী সুভদ্রা র নব-কলেবরের নীতির জন্য ২১ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে   ২) শ্রী মন্দিরের চতুষ্পার্শ্বের রাস্তা  মেরামত এবং সম্প্রসারন  যার  ব্যয় বরাদ্দ রাশি ২০ কোটি টাকা ,  । ৩) জয়-বিজয় দ্বারের রুপোর ছাউনির জন্য ২ কোটি টাকা , ৪) প্রভুর দৈনন্দিন নীতি সম্পাদন এবং সেবা পূজার উদ্দেশ্যে ১৫ কোটি ৩২ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে , ৫) শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের কর্মচারীদের মাস মাহিনা  এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বাবদ ২৫ কোটি ২৫ লক্ষ ৭৪ হাজার ৮৫০ টাকা ব্যয় বরাদ্দ , ৬) সেবায়তদের পুত্র সন্তানদের বৈদিক শিক্ষা বাবদ এক আদর্শ বিদ্যালয় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠা হবে । ৭) প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ৩ কোটি ২৭ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ , 8) শ্রী গুন্ডিচা মন্দিরের সংগ্রহালয় নির্মাণের প্রস্তাব ,  আনন্দ বাজার পুনরুজ্জীবিত , আঠার নালার গরুড় মূর্তি প্রতিষ্ঠা , শ্রী গুন্ডিচা ভক্ত-নিবাস নির্মাণ ,
২০১৫ নব-কলেবরের কার্য্যসূচী ঃ-
১. ২৯ মার্চ ২০১৫ রবিবার , বনযাগ যাত্রা আরম্ভ ২০১৫ নব-কলেবর কার্য্যসূচী ঃ-
১. ২৯ মার্চ ২০১৫ রবিবার , বনযাগ যাত্রা আরম্ভ (সম্পূর্ণ যাত্রা পদব্রজে) ,  চৈত্র মাসের শুক্ল দশমী থেকে সুরু হয় বনযাগ  যাত্রা । জগন্নাথ বল্লভ মঠে রাত্রিযাপন ।
২. ৩০ মার্চ ২০১৫ সোমবার , মধ্য রাত্রিতে দইতাপতিরা জগন্নাথ বল্লভ মঠ ছেড়ে ‘নুয়ানোই’ নদীর কূল সংলগ্ন আশ্রমে রাত্রিযাপন
৩. ৩১ মার্চ ২০১৫ মঙ্গলবার , আশ্রম থেকে বেরিয়ে মেরিন ড্রাইভ রাস্তায় পদব্রজে রামচন্ডী মন্দিরে রাত্রি যাপন ।
৪. ১ লা এপ্রিল  ২০১৫ বুধবার  পূর্বাহ্ণে যাত্রা সুরু এবং রাত্রে ‘কুঢেই’ গ্রামের “শঙ্করে-শ্বর মন্দিরে”রাত্রিযাপন ।
৫. ২রা এপ্রিল ২০১৫ বৃহস্পতিবার তে কাকটপুর “মা মঙ্গলার মন্দিরে” পৌঁছবেন । মা মঙ্গলার মন্দিরের “দেউলি মঠে” ২ তারিখে সকলে পৌঁছে রাত্রিযাপন করবেন ।
৬.  ৩রা এপ্রিল ২০১৫ শুক্রবার  থেকে মা মঙ্গলার পূজার্চনা সুরু হবে । এর পর মা মঙ্গলা প্রসন্ন হলে স্বপ্নাদেশ হবে দারুর অবস্থিতি সম্পর্কে সূচনা ।
৭. ৪ঠা এপ্রিল ২০১৫ শনিবার থেকে দারু অন্বেষণে ৬ টি দলে বিভক্ত হয়ে পবিত্র দারু সন্ধানে যাত্রা সুরু।
৮.প্রায়  এক সপ্তাহের মধ্যে দারু চিহ্নট ক্রিয়া সম্পন্ন । প্রশাসনের দ্বারা পবিত্র দারু সম্বন্ধে ঘোষণা ।
…………… *******…………..
৯. ২ জুন ২০১৫ মঙ্গলবার দেব-স্নান পূর্ণিমা । তিন ঠাকুরের জর হয় তাকে ‘অণসর ঘরে বাস’ বলে। এখানে ঠাকুরকে রাজবৈদ্য দ্বারা ঔষধাদির প্রলেপ এবং সেবা শুশ্রূষা করা হয় । এরপর ঠাকুরের জর ছাড়ে এবং ঠাকুর  সুস্থ হন ।
এরপর বিগ্রহ পরিবর্তন রুদ্ধ দ্বারে । সম্পূর্ণ রুদ্ধ দ্বারে নতুন বিগ্রহ  বিশ্বকর্মা র দ্বারা সুসম্পন্ন । সর্বসাধারণ এবং প্রশাসনের কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়না এইসময় ।
১৫ ই জুন ২০১৫ সোমবার , বলরাম , মা সুভদ্রা ও  জগন্নাথ মহাপ্রভুর  ব্রহ্ম পরিবর্তন । বড় পাণ্ডা করেন ।
এর পর   পূরণ বিগ্রহ কৈলি বৈকুণ্ঠে স্থানান্তরিত এবং সমাধি । উত্তর দ্বারের সংলগ্ন কৈ্লি বৈকুণ্ঠ ।
১৭ ই জুলাই  ২০১৫ , শুক্রবার ঃ তিন ঠাকুরের  নব যৌবন দর্শন । এই দর্শন অত্যন্ত পুণ্য অর্জন করে তাই লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয় ।
১৮ ই জুলাই ২০১৫ শনিবার শ্রী গুন্ডিচা যাত্রা  বা  জগন্নাথের রথ যাত্রা ।
২৬ শে জুলাই ২০১৫ রবিবার  উল্টো রথ যাত্রা ।
২৭ শে জুলাই ২০১৫ সোমবার তিন ঠাকুরের সোনা বেশ ।

চতুর্ধা মূর্তির ব্রহ্ম পরিবর্তন ও ব্রহ্মাসন

 

 চতুর্ধা মূর্তির ব্রহ্ম পরিবর্তন
শ্রী মন্দির পালটাবে মহাশ্মশান , দেবী কাঁদবেন মন্দিরে , মন্দিরের মধ্যে ভৈরবী বিচরণ করবেন । কাল অর্থাৎ ১৫.০৬.২০১৫ তারিখ রাতে । শুনতে আশ্চর্য লাগলেও নব-কলেবরের আগে ব্রহ্ম পরিবর্তনের দিন রাতে কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে পুরীর শ্রী জগন্নাথ মন্দিরে। 
ব্রহ্ম পরিবর্তন পরম ব্রহ্মর পরম লীলা । আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন। এ এক ঈশ্বরীয় মুহূর্ত । “যে পরম ব্রহ্মকে ইন্দ্র , চন্দ্র ,ও কুবের আদি পাওয়ার জন্য মাথা খোঁড়েন তিনি স্বয়ং জগন্নাথ প্রভু ছার মনুষ্যকে দর্শন দেন এবং দেবেন । এর থেকে ভাগ্যবান মুহূর্ত আর মানুষের জন্মে কি আছে?” কথাটা উল্লেখ করে জগন্নাথের মুখ্য বাড়-গ্রাহী জগন্নাথ স্বাইঁ মহাপাত্র (জগুনি) , চোখ ছল ছল করে...অশ্রু ধারা ঝরিয়ে...ভক্তি গদ গদ হয়ে বলেন। আর মাত্র এক দিন পর শ্রী মন্দিরে শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভুর ব্রহ্ম বা ঘট পরিবর্তন করবেন তিনি । এ কথা ভাবার সময় তাঁর মনে শ্রদ্ধ্যা ও ভক্তিভাব আপনা হতে চলে আসছে এবং দুই নেত্র-থেকে ভক্তির অশ্রু ধারা বয়ে চলেছে।
এইখানেই ভক্তের সঙ্গে ভগবানের মিলন । 
নব-কলেবর সম্বন্ধে কিছু তথ্য:-
যে বছর জোড়া আষাঢ় পড়ে সেই বছরটি শ্রী জগন্নাথ , বলভদ্র ও মা সুভদ্রার নব-কলেবর হয় । সাধারণত জোড়া আষাঢ় ৮, ১২ ,১৬ কিম্বা ১৯ বছর পর পড়ে । এবারে ১৯ বছর পর তিন ঠাকুরের নব-কলেবর যাত্রা সম্পন্ন হবে। বিংশ শতাব্দীর নব-কলেবর যাত্রা প্রথমে ১৯১২ ,১৯৩১ ,১৯৫০ , ১৯৬৯ , ১৯৭৭ এবং ১৯৯৬ সালে হয়েছিল। এই বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে নব-কলেবর যাত্রা ১৯ বছর বাদে পড়েছে । নব-কলেবর
অতিতে শ্রী জগন্নাথের ১৯৯৬ সালের নব-কলেবরে ,‘জগুনি’ দইতাপতি ভাবে কার্য্য সম্পাদন করেছেন। তাই তাঁর কিছু অভিজ্ঞতা আছে ওই বিষয়। তিনি বলেন ১৫ তারিখ সকালে কিছু না খেয়ে শুধু পানিয় হিসেবে সর্বত পান করে মন্দিরে প্রবেশ করবেন। ওই দিন মন্দিরের ভেতরে কোন সেবায়ত বা অন্য কোন মানুষ থাকবেন না । রাত ৮ টার মধ্যে মন্দির শোধন হবে এবং সমস্ত দ্বার বন্দ করে দেওয়া হবে । মন্দির প্রশাসন সমস্ত পার্শ্ব দেব দেবীর মন্দির এবং মুখ্য মন্দিরে তালা ঝুলিয়ে তালার চাবি দইতাপতি সেবায়তকে হস্তান্তর করে চলে আসবেন।
বিলম্বিত রাত্রে পুরী মন্দির এবং সমস্ত পুরী সহরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সম্পূর্ণ অন্ধকার করে দেওয়া হবে। মন্দির পরিসরে ছামু দুহুড়ি বা প্রদীপের আলো প্রজ্বলিত হবে । এরপর নতুন বিগ্রহকে পহন্ডি করে অণসর ঘরে (জগন্নাথের স্নান যাত্রার পর তিন ঠাকুরের জ্বর হয় তাই ওই ঘরে অধিষ্ঠান করেন) আনা হয়। মন্দিরে কেবল মাত্র চার জন বাড়-গ্রাহী ও দইতাপতি সেবায়ত থাকবেন। তারপর রুদ্ধ গৃহের মধ্যে ব্রহ্ম পরিবর্তন কার্য্য আরম্ভ হবে। এইসময় একটি মাত্র দীপ জ্বলবে । হাতে পাট বস্ত্র দিয়ে সম্পূর্ণ হাতের চেটো মুড়ে দুচোখ বাঁধা থাকে ওই অবস্থায় ব্রহ্ম পরিবর্তন হয় । এই কার্য্য শেষ হওয়ার পর বাড়-গ্রাহীরা বাইরে অপেক্ষারত কিছু দইতাপতিদের ভেতরে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানান । এরপর কেবল মাত্র ওরা নতুন বস্ত্র পরিধান করে নতুন বিগ্রহকে দর্শন করেন সুবর্ণ মোহর, রুপোর টাকা ইত্যাদি সমর্পণ করে নতুন ঠাকুরের দর্শন করেন। প্রভুর কাছে ভাব ভক্তিটাই আসল।
এরপর পুরন বিগ্রহকে কৈলি বৈকুণ্ঠে পাতালি করন করা হয় । ব্রহ্ম পরিবর্তনের সময় কোন বাধা বিঘ্ন না হওয়ার জন্য দেউল করণ সেবায়তরা বড় বড় তরওয়াল নিয়ে সিংহ দ্বারে এবং পতিত পাবন মূর্তির কাছে ঘোরা ঘুরি করেন । এটা আদিম যুগ থেকে প্রচলিত।
পাতালি কার্য্য শেষ হওয়ার পর দইতাপতি ভাইরা মুক্তিমন্ডপের কাছে তিল তেল মেখে দক্ষিণ দ্বারদিয়ে মার্কণ্ড পুষ্করিণীতে যান এবং ওই পুষ্করিণীতে স্নান সেরে পুরনো বস্ত্র ত্যাগ করে আবার নতুন বস্ত্র পরিধান করেন। হলুদের জলে পা ধুয়ে নির্মাল্য সেবা করে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করেন । 
বিগত ২০০ বছর ধরে বিভিন্ন জগন্নাথ সংস্কৃতির গবেষকরা নির্দিষ্ট কোন তথ্য দিতে পারেন নি। কেউ কেউ একে গৌতম বুদ্ধের দাঁত , জীবন্ত শালগ্রাম শিলা , সুবর্ণ শ্রী যন্ত্র , সুবর্ণ নারায়ণ মূর্ত্তি , শ্রী কৃষ্ণের অদগ্ধ পিণ্ড ইত্যাদি বলে বর্ণনা করেছেন । কিন্তু কারুর মত ই গ্রহণিয় হয়নি প্রমাণের অভাবে । ব্রহ্ম পরিবর্তন যিনি করেন তার পর তিনি স্বল্পায়ু হয়ে ইহ-ধাম ত্যাগ করেন। এটাই চিরা চরিত হয়ে এসেছে। তাই বয়োজ্যেষ্ঠ দইতাপতিকেই এই গুরু দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ব্রহ্ম পরিবর্তনের দিন সারা শ্রীক্ষেত্র শ্মশানের মতন অনুভব হয়। অনেক অনুভূতির উল্লেখ আছে তবে সেগুলো আলোচনার পর্যায়ে না আনাই শ্রেয় । 
অনুবাদ: ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৪.০৬.২০১৫ / বেলা ৩.৩৮
 এই আসনকে ব্রহ্মাসন বলে । এই আসনে ব্রহ্ম ঘট রেখে প্রাণ স্থাপনের পর ব্রহ্ম পরিবর্তন হয় । চতুর্ধা বিগ্রহর চারটি ব্রহ্ম ঘট স্থাপন করা হয়। প্রভু শ্রী বলভদ্র , দেবী সুভদ্রা , প্রভু শ্রী জগন্নাথ এবং শ্রী সুদর্শন । এই বছর বিগত এগারো দিন ধরে চলা যজ্ঞর পূর্ণাহুতি পুরীর গজপতি রাজা দিব্য সিংহ দেব সোমবার(১৫.০৬.২০১৫) বিকেল ৫.৩০ দিয়ে দইতাপতিদের জন্য অপেক্ষারত থাকেন । দুর্ভাগ্য বসত: ব্রহ্ম পরিবর্তন মঙ্গলবার বেলা দুটোর সময় সম্পূর্ণ হয় যা পরম্পরা ভঙ্গ করে সম্পন্ন হয়েছে। ভক্তরা মন ক্ষুণ্ণ হয়েছেন। সোমবার সারা রাত ভক্তরা প্রদীপ জ্বালিয়ে অরুণ স্তম্ভের সামনে বসে থাকেন ব্রহ্ম পরিবর্তনের পর দইতাপতিদের অপেক্ষায় । মন্দির প্রশাসনের এতে কোন ভূমিকা নেই কারন এটা সম্পূর্ণ দইতাপতিদের অক্তিয়ারে । প্রায় ১১ ঘণ্টা লাগে শ্রী জীউদের গুপ্ত-নীতি । তাই সব নীতি পিছিয়ে যায় । মঙ্গলবার বেলা ৫ টার সময় চতুর্ধা বিগ্রহ কৈলি বৈকুণ্ঠে পাতালি-করনের পর দইতাপতিরা সিংহ দ্বারদিয়ে মন্দিরের বাইরে আসেন । এবারে দুই দইতাপতি দলের মধ্যে যুক্তি তর্ক হওয়াতে সব নীতি পিছিয়ে যায় । বিবাদ সমাধান হতে চার ঘণ্টা সময় লাগে । বিগ্রহ নির্মাণের জন্য নিযুক্ত ১০ জন মহারানার মধ্যে ৬ জন অনভিজ্ঞ । তাই বিগ্রহ নির্মাণ কার্য্য সোমবার রাত ১১ টায় সমাপ্ত হয়। বাইরে ভক্তদের প্রচণ্ড ভিড়। এই প্রথম ব্রহ্ম পরিবর্তনে বিঘ্ন ঘটেছে । যা রাত দুটোর সময় হওয়ার কথা সেটা তার পরের দিন অর্থাৎ ১৬.০৬.২০১৫ বেলা দুটোয় সমাপ্ত হয়। ............... 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথি


ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথি

 
 
 
 
 
 
Rate This

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথি
শ্রীকৃষ্ণ হলেন বিষ্ণুর অবতার। তার পবিত্র জন্মতিথিকে বলা হয় জন্মাষ্টমী। এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রাচীন ধর্মীয় উৎসব। দিবসটিকে কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তীসহ বিভিন্ন নামেও ডাকা হয়। শ্রীকৃষ্ণকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তারা বিশ্বাস করেন, পৃথিবী থেকে দুরাচারী দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যই এ মহাবতার স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। ধর্মগ্রন্থ গীতাও সেই সাক্ষ্য দেয়।
হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হলে জন্মাষ্টমী পালিত হয়। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো একসময় দিনটি পড়ে। এবার বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে ১৭ আগস্ট।
খ্রিস্টপূর্ব ৩২২৮ সালে শ্রীকৃষ্ণ অবতাররূপে পৃথিবীতে আসেন। তার জন্মের সময় পৃথিবী পাপ ও অরাজকতায় পরিপূর্ণ ছিল। সনাতন বিভিন্ন শাস্ত্রে তার মহিমার শেষ নেই, শেষ নেই নাম ও উপাধির। ঈশ্বরতত্ত্বের মহান প্রতীক তিনি। বেদে বলা হয়েছে ঋষিকৃষ্ণ ও দেবতাকৃষ্ণ। মহাভারতে রাজর্ষিকৃষ্ণ, শাসক ও প্রজাপালক কৃষ্ণ, অত্যাচারী দমনে যোদ্ধাকৃষ্ণ। ইতিহাসে যাদবকৃষ্ণ ও দর্শনশাস্ত্রে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণ। শ্রীমদ্ভগবদ গীতায় অবতারকৃষ্ণ, দার্শনিক কৃষ্ণ, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ ও ঈশ্বরায়িত কৃষ্ণ।
ঘোর অমানিশার অন্ধকারে জন্মগ্রহণ করায় তার গায়ের রং শ্যামল। অন্য অর্থে ধূসর, পীত, কিংবা কালো। সংস্কৃত কৃষ্ণ শব্দটির অর্থ কালো, ঘন বা ঘন-নীল। মূর্তিগুলোতে তার গায়ের রং সাধারণত কালো ও ছবিগুলোতে নীল দেখানো হয়। তার রেশমি ধুতিতে হলুদ রং ও মাথার মুকুটে একটি ময়ূরপুচ্ছ শোভা পায়। প্রচলিত মূর্তিগুলোতে তাকে বংশীবাদনরত বালক বা যুবকের বেশে দেখা যায়। একটি পা অপর পায়ের উপর খানিক বাঁকা অবস্থায় থাকে। বাঁশিটি ঠোঁট পর্যন্ত ওঠানো থাকে। ঘিরে থাকে গরুর দল। এটি তার দিব্য গো-পালক সত্ত্বার প্রতীক। কোনো কোনো চিত্রে গোপী-পরিবৃত অবস্থাতেও দেখা যায়।
সনাতন ধর্মে সময়কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে একটি দ্বাপর যুগ। এ যুগের শেষদিকে মথুরা নগরীতে তার শুভ আবির্ভাব। তার জন্ম অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে, যিনি কিনা তার মামা। তার জন্ম কাহিনীতে দেখা যায়, মগধ অধিপতি জরাসন্ধ ১৮ বার মথুরা আক্রমণ করে ব্যর্থ হন। তখন মথুরার রাজা উগ্রসেনের ছেলে কংসকে হাত করতে দুই মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দেন। কংস নিজেও ছিল অত্যাচারী। তার ছিল সিংহাসনের লোভ। জরাসন্ধের সঙ্গে মিলে হয়ে উঠেন আরও দুর্বিনীত। কিন্তু বংশের অন্যান্য যাদবরা চিরশত্রু জরাসন্ধের সঙ্গে আত্মীয়তাকে ধিক্কার জানায়।
একসময় কংস উগ্রসেনকে বন্দি করে সিংহাসন দখল করে। তখন আত্মীয়-স্বজন ও বিশেষ করে যাদববংশ বিদ্রোহী হয়ে উঠে। তাদের শান্ত করতে যাদববংশের শুর সেনের ছেলে বসুদেবের সঙ্গে বোন দেবকীর বিয়ে দেন। বিয়ের পর দেবকী ও বসুদেব রথে করে যাওয়ার সময় কংস দৈববানী শুনতে পান- এদের অষ্টম সন্তানই হবে তার মৃত্যুর কারণ।
কংস দেবকীকে হত্যা করতে চাইলে বসুদেব আশ্বস্ত করেন, দেবকীর সন্তান জন্ম নিলে কংসের হাতে তুলে দিবেন। কংস তাদের দুইজনকে কারাগারে বন্দি করেন। এর দশমাস দশদিন পর দেবকী এক পুত্রসন্তান জন্ম দেন। সঙ্গে সঙ্গে কংসের হাতে সন্তানকে তুলে দেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বসুদেব। এভাবে একে একে খুন হয় তাদের ছয় সন্তান।
অন্যদিকে, গোকুলে বাস করতেন বসুদেবের প্রথম স্ত্রী রোহিনী। রোহিনীকে দেবকীর সপ্তমগর্ভ দান করা হয়। জন্ম নেয় ছেলে বলরাম। আর দেবকী আবার সন্তানসম্ভবা হলে কারাগারে বসানো হয় কঠোর নিরাপত্তা। চারদিকে আলোয় উদ্ভাসিত করে অষ্টমী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেন পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ। জন্মের সময় শিশুটি চার হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম ধারণ করেছিল। এ ছাড়া দেহে শোভা পাচ্ছিল মনিরত্নের অলংকার। বসুদেব ভক্তিতে করজোড়ে প্রণাম ও বন্দনা শুরু করেন। বন্দনা ও দেবকীর প্রার্থনা শেষে শ্রীকৃষ্ণ একজন সাধারণ শিশুর রূপ ধারণ করেন। এ সময় দৈবভাবে কারারক্ষীরা ঘুমিয়ে পড়ে। তখন বসুদেব শ্রীকৃষ্ণকে গোকুলে যশোদা ও নন্দের কাছে রেখে আসেন। এদের কাছে কৃষ্ণ বড় হন। বসুদেব কারাগারে যশোদা ও নন্দের সদ্যজাত মেয়েকে নিয়ে আসেন।
পরদিন কংস কারাগারে আসেন। তিনি ওই মেয়েকে মারতে গেলে দৈবভাবে সে অদৃশ্য হয়ে যায়। তখন অদৃশ্য কন্ঠ জানায়, কৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছে। এরপর কৃষ্ণের খোঁজ চলতে থাকে। কিন্তু কংস নানাভাবে ব্যর্থ হন। শ্রীকৃষ্ণ গোকূলে বড় হতে থাকেন। মুক্তির আশায় নিপীড়িত মানুষ তার অনুসারী হয়ে উঠে। অবশেষে কংস মথুরায় মল্লক্রীড়ার আয়োজন করে আমন্ত্রণ জানান শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামকে।
সেখানে কৃষ্ণকে পিষে মারার জন্য পাগলা হাতি রাখা হয়। এছাড়া থাকে চানুর ও মুষ্টির নামে দুই খ্যাতিমান মল্লবীর। কিন্তু অন্তর্যামীরূপে শ্রীকৃষ্ণ কংসের সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে মুষ্ঠির আঘাতে হাতি, মুষ্টির ও চানুকে হত্যা করে। কংস সেনাদের অস্ত্র ধারণ করতে বললেও কেউ সাড়া দেয় না। তখন কংস নিজেই অস্ত্রধারণ করে। কিন্তু কৃষ্ণের লৌহমুষ্ঠির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এভাবে মথুরাবাসীকে অত্যাচারী রাজার হাত থেকে রক্ষা করেন।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে এদিনে শুধু উপাবাসেও সাতজন্মের পাপ নষ্ট হয়। তাই এ দিনে উপবাসসহ শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করা হয়। এর সঙ্গে ধীরে ধীরে যুক্ত হয় মিছিল ও শোভাযাত্রার মতো অনুষ্ঠান। একসময় ঢাকার জন্মাষ্টমীর মিছিল উপমহাদেশে বিখ্যাত ছিল। ইতিহাস লেখক ভুবন মোহন বসাক ও যদুনাথ বসাকের দুটি বই থেকে জানা যায়, জন্মাষ্টমীর মিছিল শুরু হয় ১৬ শতকে।
১৬১০ সালে ইসলাম খাঁর ঢাকা নগরের পত্তন করেন। ভুবন মোহনের মতে, এর আগে বংশালের কাছে এক সাধু বাস করতেন। ১৫৫৫ সালে তিনি শ্রীশ্রী রাধাষ্টমী উপলক্ষে বালক ও ভক্তদের হলুদ পোশাক পরিয়ে একটি মিছিল বের করেন। এর প্রায় ১০-১২ বছর পর রাধাষ্টমীর পরিবর্তে জন্মাষ্টমীর জাঁকজমকপূর্ণ একটি মিছিল বের করেন। সে উদ্যোগেই ১৫৬৫ সালে প্রথম জন্মাষ্টমীর মিছিল ও শোভাযাত্রা বের হয়।
পরবর্তীতে এ মিছিলের দায়িত্ব বর্তায় নবাবপুরের ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস বসাকের পরিবারের ওপর। কালক্রমে জন্মাষ্টমীর মিছিল একটি সাংগঠনিক রূপ ধারণ করে এবং প্রতিবছর জন্মাষ্টমী উৎসবের নিয়মিত অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। পরে ক্ষমতা ও অঞ্চলকেন্দ্রিক বিবর্তন ঘটে। এছাড়া পরিবর্তিত হয় মিছিলের অনুষঙ্গ। যেমন- প্রথমদিককার মিছিলে নন্দঘোষ, যশোদা, শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামকে আনা হতো। পরে যুক্ত হয় অন্যান্য অনুষঙ্গ। তবে মূল কাঠামোটিতে ছিল প্রথমে নাচগান, এরপর দেব-দেবীর মূর্তি, লাঠিসোঁটা, বর্শা, নিশান প্রভৃতি নিয়ে বিচিত্র পোশাক পরিহিত মানুষ। পটিভূমিতে থাকত নানা রকমের দৃশ্য। এ সব দৃশ্যে ব্যবহার হতো কাগজ, রং, কাপড়, মোম, চুমকি প্রভৃতি উপকরণ।
আগের মতো না হলেও ঢাকায় এখনও জন্মাষ্টমী উৎসব ও শোভাযাত্রা জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়। সাধারণত তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠান করে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি। এছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন মন্দিরে পূজা অর্চনা, হরিনাম সংকীর্তন ও নামযজ্ঞেরও আয়োজন করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এদিন বন্ধ থাকে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দিবসটির তাৎপর্য সম্পর্কিত বানী দেওয়া হয়।
এভাবে দিবসটি প্রতিবছর ফিরে আসে। শ্রীকৃষ্ণ ভক্তদের সিক্ত করে তার ভালোবাসা ও করুণা ধারায়। বাংলায় নদীয়া অঞ্চলে শ্রীচৈতন্যের ভক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের কর্মকাণ্ড ও দর্শন নতুন একটি মাত্রা পায়। যা জাত-পাতবিরোধী আন্দোলন