শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০১৫

তারিণী মায়ের মন্দির ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৫.০৬.২০১৫ /





তারিণী মায়ের মন্দির
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৫.০৬.২০১৫ /
১৪৮০ খৃস্টাব্দে পুরীর গজপতি রাজা শ্রী পুরুষোত্তম দেব , ‘কাঞ্চী যুধ্যের’ সময় তৎকালীন কেঞ্জোর রাজ্যের রাজা শ্রী গোবিন্দ ভঞ্জ দেও মহাশয়কে তাঁর সেনাপতি রূপে আহ্বান করেন । শ্রী গোবিন্দ ভঞ্জ দেব যুধ্যে পারদর্শী ছিলেন তাই শ্রী পুরুষোত্তম দেবের আহ্বানে তাঁর সঙ্গে কাঞ্চি অভিযানে যাত্রা করেন। গজপতি রাজা পুরুষোত্তম দেব কাঞ্চী জয় করে কাঞ্চী রাজার রাজ কন্যা ‘পদ্মাবতী দেবীকে’ সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং পাট রানি করেন । এই ইতিহাস অতি প্রাচীন 
ছোট করে বলতে হলে ঃ পুরীর জগন্নাথের রথ দেখতে কাঞ্চীর রাজা এসেছিলেন । রথের প্রারম্ভে পুরীর গজপতি মহারাজা , শ্রী জগন্নাথ ,বলভদ্র এবং মা সুভদ্রার রথে ‘ছেরা পঁহরা’ করে থাকেন। এটাই রীতি । ছেরা পঁহরা অর্থাৎ সোনার ঝাঁটা দিয়ে চন্দন এবং বেল ফুল দিয়ে সারা রথ পরিক্রমা করে নিজে রাজা ঝঁট দেন । সেই ঝাঁটা হাতে রাজাকে দেখে কাঞ্চীর রাজা পুরীর গজপতি রাজাকে ম্যাথোর ভাবেন এবং উপহাস করেন । এতে গজপতি রাজা অপমানিত হন এবং শপথ করেন কাঞ্চী রাজ্য জয় করে রাজকন্যা পদ্মাবতী দেবীকে মহারানী করবেন । যা ভাবা তাই হল । সেই যুধ্যে শ্রী গোবিন্দ ভঞ্জ দেব সেনাপতির ভূমিকা পালন করে কাঞ্চী যুধ্যে জয়ী হয়ে ফেরেন ।
কাঞ্চী যুধ্যের জয়ের খুশীতে গজপতি রাজা পুরুষোত্তম দেব শ্রী গোবিন্দ ভঞ্জ দেবেকে জিজ্ঞাসা করেন তাঁর কি অভিলাষ ! শ্রী গোবিন্দ ভঞ্জ দেব মা তারিণীকে তাঁর রাজ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে পূজো করতে চান এবং কেঞ্জোরে মায়ের মন্দির বানানোর পরিকল্পনা করেন। কিন্তু গজপতি রাজা বলেন এই আশা পূরণের উদ্দেশ্যে ‘মা তারিণীকে’ নিয়ে যাওয়ার অনুমতির জন্য মাকে প্রার্থনা করতে ; কারন মায়ের অনুমতি বিনা তাঁকে নেওয়া সম্ভব নয় । এর পর গোবিন্দ দেব মায়ের পূজোয় বসেন । মা তারিণী তাঁর পূজোয় সন্তুষ্ট হন বটে কিন্তু একটা সর্ত রাখেন। মা বলেন মা’কে নিয়ে যাওয়ার সময় রাজা গোবিন্দ দেব যেন পেছন ঘুরে না তাকান মা আসছেন কিনা দেখতে । রাজা রাজি হন মা’য়ের ওই সর্তে । রাজার সঙ্গে মা তারিণী ঘোড়ায় চড়ে রাজার পেছন পেছন যাচ্ছিলেন । কিন্তু ঘটগাঁর কাছে গভীর জঙ্গলে মায়ের ঘোড়ার আওয়াজ রাজা শুনতে পেলেন না । এতে রাজা বিব্রত হয়ে পেছনে তাকান । সেই সময় মা তারিণী প্রস্তরে পরিণত হয়ে এক বট গাছের তলায় অধিষ্ঠান করেন। রাজা যত মনঃ কষ্ট করে পূজার্চনা করলেও আর মা তাঁর রূপ ধারণ করেন না। সেই থেকে ‘মা তারিণী’ ঘটগাঁতে পূজো পেয়ে আসছেন ।
এই হল মা তারিণীর রূপ কথা । মা তারিণী মা কালীর আরেকটি রূপ । এই রূপকথা যুগ যুগ ধরে লোকের মুখে শুনতে পাওয়া যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন