সোমবার, ২০ জুলাই, ২০১৫

মা লক্ষ্মী




     
   
  দেবী লক্ষ্মী হলেন ধন সম্পদের দেবী। আদিশক্তির রাজসিক স্বরূপ । অগ্নি পুরাণ মতে শ্রী বা লক্ষ্মী হলেন যজ্ঞবিদ্যা , তিনিই আত্ম্যবিদ্যা , যাবতীয় গুহ্যবিদ্যা ও মহাবিদ্যা ও তিনি –‘যজ্ঞবিদ্যা মহাবিদ্যা গুহ্যবিদ্যা চ শোভনা ।আত্ম্যবিদ্যা চ দেবি বিমুক্তিফলদায়িনী ।।’ দেবী ভাগবত মতে যে স্বর্গে তিনিই স্বর্গ লক্ষ্মী , রাজগৃহে তিনি রাজলক্ষ্মী , গৃহে তিনি গৃহলক্ষ্মী । তিনি শান্তা , দান্তা , সুশীলা , সর্ব মঙ্গলা , ষড়রিপু বর্জিতা ।
পুরানে আছে সাগর মন্থন কালে দেবী লক্ষ্মী সমুদ্র থেকে প্রকট হন । সাগর হল লক্ষ্মী দেবীর পিতা । সাগরেই মুক্তা , প্রবাল আদি রত্ন পাওয়া যায় । রত্ন হল ধন , যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন লক্ষ্মী । এই হল দেবী লক্ষ্মীর সামগ্রিক স্বরূপ । দশ মহাবিদ্যার দশম মহাবিদ্যা কমলা দেবী হলেন মা লক্ষ্মী। স্বতন্ত্র তন্ত্র নামকএক তন্ত্র শাস্ত্র মতে কোলাসুর নামক এক অসুরকে বধ করার জন্যই দেবী কমলার আবির্ভাব । বারাহী তন্ত্র মতে পুরাকালে প্রজাপতি ব্রহ্মা, ভগবান বিষ্ণু, ভগবান শিব এই কমলা দেবীকে পূজা করেন বলে কমলা মায়ের এক নাম ‘ত্রিপুরা’ ।
মা লক্ষ্মী কমল আসনে থাকেন। কমল হল সর্বাত্মক বিকাশের প্রতীক ।
এমন কথিত আছে মা লক্ষ্মী পদ্মা নদী রূপে বঙ্গদেশে প্রবাহিতা আবার গঙ্গা , গোদাবরী , কৃষ্ণা , সিন্ধু রুপে ইত্যাদি ভারতের বিভিন্ন নদির অববাহিকাতে শশ্য শ্যামলা করে তুলেছেন । তার জলে বঙ্গদেশ ও ভারতবর্ষের মৃত্তিকা হয়েছে উর্বরা , শস্যে ভরা । তিনি কৃষিজ লক্ষ্মী। লাঙ্গল কর্ষণ কালে লক্ষ্মী অবতার সীতা মায়ের আবির্ভাব । লাঙ্গল দিয়ে জমিতে হাল বয়ে জমি উর্বরা করে চাষাবাদ করলেই মাঠ ভরে উঠবে সোনালী ধানে। এদিক থেকে তিনি কৃষি লক্ষ্মী। তাই ভাদ্র মাসে,পৌষ মাসে কৃষি লক্মী পূজা হয় প্রায় ঘরে। খনিজ লক্ষ্মী বলে সোনার দ্রব্য বোঝায়। সোনাকে আমরা মা লক্ষ্মীর সাথে তুলনা দিয়ে থাকি। ঐশ্বর্যের আর এক উৎস সমুদ্র। পুরান বলে সাগর মন্থন কালেই দেবী বিষ্ণুপ্রিয়ার আবির্ভাব। সাগরে ডুব দিয়ে প্রবাল, শঙ্খ, কড়ি আদি রত্ন সামগ্রী পাওয়া যায়। বানিজ্য করতেও দেখা যায় এই দেবীর আশীর্বাদের প্রসঙ্গ। নববর্ষে দোকানে ব্যবসায়ী গণ গণেশের সহিত মা লক্ষ্মীর পূজো করেন । এছাড়া লক্ষ্মী পূজোতে কলা গাছের কান্ড দিয়ে নৌকা বানিয়ে পূজোতে দেওয়া হয়, তা বানিজ্য ও লক্ষ্মী ঘরে আনারই প্রতীক। শ্রী রামচন্দ্র সীতা মাতা উদ্ধারের জন্য বা রাজা সুরথ রাজ্য উদ্ধারের জন্য এই মহালক্ষ্মী স্বরূপা দুর্গা দেবীর পূজা করেছিলেন। এই ভাবে লক্ষ্মী দেবীর একটি রূপ আমাদের সামনে ফুটে ওঠে ।
কোজাগোরী পূর্ণিমা বা শারদ পূর্ণিমাতে আমরা মা লক্ষ্মীর পূজো করি, যদিও দীপাবলি তেই সমগ্র দেশে পূজিতা হন। পূর্ণিমার চাঁদের আলো যখন দিগ দিগন্তে সন্ধ্যার কালো আঁধার কাটিয়ে আলোর ছটা ছড়িয়ে পড়ে, তখন উলু, শঙ্খ ধ্বনি সহকারে আমরা মা লক্ষ্মীর পূজার্চনা করি। এমন বলা হয়, দেবী জেগে খবর নেন- কে জেগে আছে –
নিশীথে বরদা লক্ষ্মীঃ জাগরত্তীতিভাষিণী ।
তস্মৈ বিত্তং প্রযচ্ছামি অক্ষৈঃ ক্রীড়াং করোতি যঃ ।।
কো জাগর্ত্তি – কে জেগে আছে ? কোজাগোরী শব্দের অর্থ এমন টাই । মা দ্বারে দ্বারে আশিষ দিয়ে যান, যে জেগে থাকে সে পায় আশিষ, কিন্তু যে ঘুমায় সে ঘুমিয়েই থাকে । আর অক্ষ ক্রীড়া মানে কিন্তু জুয়া খেলা নয়। ‘অক্ষ’ শব্দের অনেক প্রকার মানে হয় । এর মানে হয় ‘ক্রয় বিক্রয় চিন্তা’। বৈশ্য গণ এদিন জেগে ব্যবসা বানিজ্য করে ঘরে লক্ষ্মী আনার চিন্তা করেন। অক্ষ শব্দের আর এক মানে হয় জপ মালা। যারা সত্ত্ব গুনের তারা এই রাত্রি মায়ের নাম জপ করেই কাটাবেন। কো জাগর্ত্তি শব্দ তাদের কাছে আত্ম চৈতন্যের বানী। দেবীর বাহন হলেন পেঁচক। পেঁচক দিনে ঘুমায় রাতে জাগে। সাধারন মানুষ যখন ঘুমায়, পেঁচক জাগে। এ ঠিক যোগীর অবস্থা। সাধারন মানুষ যখন নিদ্রামগ্ন, যোগী তখন যোগ সাধনায়। পেঁচক ইঁদুর ভক্ষণ করে কৃষকের শস্য রক্ষা করে। এদিক থেকে এই প্রানীটি সত্যই আমাদের কাছে মা লক্ষ্মীর বার্তা, ভাব বয়ে আনে ।

২টি মন্তব্য: